আড়িয়াল বিল – মুন্সিগঞ্জ

ঢেউহীন এক পানির রাজ্যে আড়িয়াল বিল(Arial Bill)। টলটলে জল-জঙ্গলে মাথাচাড়া দিয়েছে শাপলা ফুল। আকাশজুড়ে সাদা মেঘের সঙ্গে সমান্তরালে উড়ছে অসংখ্য সাদা বক। অল্প এগোতেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্য। সবুজে সমারোহে বুদ হয়ে পড়ছে জোড়া চোখ। নীলচে পানিতে স্পষ্ট হওয়া সাদা মেঘের প্রতিবিম্ব দেখে যে কেউ মায়াবী জগতের ভাবনায় ডুবে যেতে পারবে। বাঁক নিতেই শাপলা ফুলের অরণ্যে। হিজল গাছের আঁকাবাঁকা প্রতিবিম্বর সঙ্গে মনে গ্রাস করবে ভুবনচিলের পাখা গুটিয়ে বসে থাকা। এলোমেলো জলপথ পাড়ি দিতেই সামনে পড়বে টলটলে পানি। এই সবই দেখতে পাবেন ঢাকার দক্ষিণে পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত প্রায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের অবভূমি আড়িয়াল বিলে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর বাজার থেকে একটি সড়ক এঁকেবেঁকে সোজা চলে গেছে আড়িয়াল বিলের দিকে। এ পথে শ্যামসিদ্ধি গ্রাম পেড়িয়ে আরও সামনে গেলে গাদিঘাট। এ পর্যন্ত পিচঢালা পথ। সেখান থেকে কালভার্ট পেরিয়ে আরও সামনে কিছু দূর গেলে সড়কের শেষ। আড়িয়াল বিলের শুরু মূলত গাদিঘাট থেকেই।

গাদিঘাট থেকে পার্সোনাল ভাবে ভালো একটা ট্রলার দেড়/দুই হাজার টাকায় সারা দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন আড়িয়াল বিল.. আড়িয়াল বিলে গেলেই নিমেষেই চোখের সামনে দেখতে পাবেন ঢেউহীন এক পানির রাজ্য।  যেখানে টলটলে জল-জঙ্গলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শাপলা ফুলের কলি। আর আকাশজুড়ে মেঘের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়ছে নাম না-জানা পাখিরা শরৎকালে গেলে দেখতে পাবেন শ্রীনগর বাজারের চারপাশটা পানিতে ভরপুর আর নদীর দু’ধারে প্রচুর কাশ ফুল ফুটে আছে। কালভার্টের নিচ দিয়ে বিলের দিকে ছুটছে খালের পানি। ট্রলারঘাট থেকে ছোট্ট একটা খাল পেরিয়ে মূল বিলে যেতে হয়। আড়িয়াল বিলে শুরুর দিকের পানিটুকু অনেক ঘোলা। এরপর কিছুদূর যাবার পরই বদলে যেতে থাকে বিলের দুপাশের দৃশ্যপট। সবুজের মিছিলে একটু একটু করে জানান দিতে থাকবে নীলচে রঙের পানি। সেই পানির ওপর সাদাটে তুলার মতো মেঘের চেহারা ফুটে উঠেছে। চোখের সামনে দেখতে পাবেন শুধু সবুজ কলমিশাক আর নীলচে পানি। আরো দেখতে পাবেন কচুরি পানার ঝাঁক আর শাপলা ফুল ,সবকিছু মিলিয়ে মনে হবে অপূর্ব এক সুন্দরের নীলা নদী ও সবুজে ঘেরা চার-পাশ।

বর্ষায় পানিতে টই টই করা আড়িয়াল বিলে, শীতে শুকিয়েতৈরী হয় বিস্তীর্ণ শস্য খেত। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। নানা রকম শীতের সবজি চাষ হয় আড়িয়াল বিলে। তবে এ বিলের বিশেষ আকর্ষণ বিশাল আকৃতির মিষ্টি কুমড়া। পুরো আড়িয়াল বিল জুড়ে শীতে চাষ হয় মিষ্টি কুমড়া। শীত শেষে পাকলে মাঠ থেকে তোলা হয়। এছাড়া শুকনা আড়িয়াল বিলে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায় নানান জাতের ছোট বড় পাখি।

শীতের শেষের আড়িয়াল বিলে কৃষকদের মূল ব্যস্ততা থাকে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে। দূরের খেত থেকে গাদিঘাটে নৌকা বোঝাই করে কুমড়া এনে জড়ো করেন তারা। আর কাছের খেতের কুমড়া মাথায় বহন করে বিলের শুরুর সড়কে জড়ো করেন। সেখান থেকে পাঠানো হয় বাজারে। আড়িয়ার বিলের কোনো কোনো মিষ্টি কুমড়া দুই মনেরও বেশি ওজনের হয়ে থাকে।

শীতের শেষে আড়িয়াল বিলে আরও চোখে পড়বে মাছ ধরার দৃশ্য। বিলের মধ্যে খাল ছাড়াও আছে কিছু জলাশয়। এসব জলাশয়ে পানি কমে যাওয়ায় মাছ ধরেন স্থানীয়রা। পানি সেচে মাছ কুড়ানোও দেখা যাবে।

আড়িয়াল বিল থেকে ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন শ্যামসিদ্ধির মঠ। শ্রীনগর বাজারের পশ্চিম দিকে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত এ প্রাচীন এ মঠের দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথের ওপরে বাংলা শিলালিপি অনুযায়ী ১৮৩৬ সালে বিক্রমপুরের জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তি শম্ভুনাথ মজুমদার এটি নির্মাণ করেন।

জনশ্রুতি আছে সম্ভুনাথ স্বপ্নে তার স্বর্গীয় পিতার চিতার উপরে মঠ নির্মাণের নির্দেশ পেয়ে মঠটি নির্মাণ করেন। প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু এ মঠ দিল্লির কুতুব মিনারের চেয়েও পাঁচ ফুট উঁচু। তাই বলা যেতে পারে এটা ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ।

অষ্টভুজ আকৃতির এ মঠ দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ২১ ফুট। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মঠের দেয়াল বেশ পুরু। মঠের উপরের দিকে বাইরের দেয়াল জুড়ে আছে শত শত খোড়ল। এগুলোতে বাসা বেধেছে শত শত সবুজ টিয়া, ঝুটি শালিক। তাই মঠটি সবসময়ই পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে।

কীভাবে যাবেন আড়িয়াল বিল

ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়াগামী যে কোনো বাসে চড়ে নামতে হবে শ্রীনগরের ভেজবাজার। ভাড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এ পথের ভালো বাস ‘ইলিশ’ পরিবহন ও বিআরটিসি। সেখান থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ে সোজা যেতে হবে গাদিঘাট। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। আড়িয়াল বিলে বেড়িয়ে আবার গাদিঘাটে এসে ফেরার রিকশা পাবেন।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: February 9, 2018

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.