গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গীপাড়ায় অবস্থিত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি (Mausoleum of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman)। প্রতিদিন হাজার হাজার লোক এ সমাধিতে আসেন জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
টুঙ্গীপাড়াকে বদলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে গড়ে প্রায় ৫ হাজারমানুষ টুঙ্গীপাড়ায় আসেন প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তারা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, আন্দোলন-সংগ্রাম, বর্ণাঢ্য জীবন ও ত্যাগ সম্পর্কে জানতে পেরে আনন্দিত হন। বঙ্গবন্ধুর কবরের বেদির পাশে দাঁড়িয়ে মুজিব আদর্শের সৈনিকরা কবরে শ্রদ্ধা জানান, তার জন্য কাঁদেন এবং বিশেষ মোনাজাত করেন।
গ্রামটি পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে হলেও গ্রামের নামেই উপজেলা সদরের নামহয়েছে টুঙ্গীপাড়া। এই টুঙ্গীপাড়াতেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে মৃত্যুহীন প্রাণ নিয়ে জন্মমাটি টুঙ্গীপাড়ায় ফিরে আসেন তিনি। পরদিন পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ সমাধিসৌধের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ৩৮.৩০ একর জমির ওপর ১৭ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সহযোগিতায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ সমাধিসৌধ নির্মাণ করে।
টুঙ্গীপাড়ার বাইগার নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে এ মাজার কমপ্লেক্স। লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো টাইলস দিয়ে গ্রিক স্থাপত্য শিল্পের আদলে নির্মিত সৌধের কারুকার্যে ফুটে উঠেছে বেদনার চিহ্ন। কমপ্লেক্সের সামনের, দু’পাশের উদ্যান পেরোনোর পরই বঙ্গবন্ধুর কবর। পাশেই তার বাবা-মায়ের কবর। এই তিন কবরকে ঘিরেই নির্মাণ করা হয়েছে মূল টম্ব। সাদা পাথরে নির্মিত গোলাকার এক গম্বুজ বিশিষ্টস মাধিসৌধের ওপর দেয়ালে জাফরি কাটা। এই জাফরি কাটা দিয়েই সূর্যের আলো আসে। উপরে কাচের কারুকাজ দিয়েও আলো ছড়িয়ে পড়ে কবরে। চারদিকে কালো টাইলস ওমাঝখানে শ্বেতশুভ্র টাইলসে বঙ্গবন্ধুর কবর বাঁধানো। উপরের অংশ ফাঁকা। কবরতিনটি ঘিরে রাখা হয়েছে সংক্ষিপ্ত রেলিং দিয়ে।
এই কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি পাঠাগার ও জাদুঘর। পাঠাগারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বইসহ প্রায় ছয় হাজার বই রয়েছে। রয়েছে গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, বকুলতলা চত্বর ও স্যুভেনির কর্নার।
প্রদর্শনী কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের নানা পর্যায়ের আলোচিত্র ছাড়াও রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা শিল্পকর্ম। এ ছাড়া মুক্তিসংগ্রামের নানা পর্যায়ের দেশ ও বিদেশ থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র। বঙ্গবন্ধুকে যে কফিনে করে ঢাকা থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটিও সংরক্ষণ করা হয়েছে সযত্নে। দর্শনার্থীরা এখানে এসে আবেগে আপ্লুত হন। শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুকে।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমাধিসৌধ খোলা থাকে। পাঠাগার খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাশেই টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’। সেখানেও ঘুরে আসা যায়।
সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স শুধু নয়, এর আশপাশের এলাকায় আরও অনেক কিছুই দেখার রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, শেখ বাড়ি জামে মসজিদ (স্থাপিত হয়েছে ১৮৫৪ সালে) ইত্যাদি। আছে হিজলতলা ঘাট, যেখানে বঙ্গবন্ধু ছোটবেলায় গোসল করতেন। দেখা মিলবে শেখ পরিবারের ঐতিহ্যবাহী একটি বড় ও একটি ছোট আকারের পুকুরের।
টুঙ্গিপাড়া কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ – ঢাকা থেকে সারসরি বাসে টুঙ্গিপাড়া যাওয়া যায়। বাসের রয়েছে দুটি রুট। একটি গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে, অপরটি গুলিস্তান থেকে মাওয়া ঘাট পাড় হয়ে। গাবতলী থেকে টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। গোল্ডেন লাইন, সেবা গ্রিন লাইন, কমফোর্ট লাইন নামের বাসে টুঙ্গিপাড়া যেতে সময় লাগে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর বাস পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৩৫০ টাকা।
গুলিস্তান থেকে টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। এ পথে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, সেবা গ্রিস লাইন ও মধুমতী পরিবহনের বাসে চড়ে টুঙ্গিপাড়া যাওয়া যায়। প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর বাস পাওয়া যাবে। ভাড়া প্রতিজন ৩০০ টাকা।
গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়া – গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম অথবা পুলিশ লাইন মোড় থেকে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে লোকাল বাস ছেড়ে যায় ৩০ মিনিট পরপর। ভাড়া ৪০ টাকা। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে যেতে পারেন টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধি দেখতে। ভাড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন :
গোপালগঞ্জ জেলা সদরে থাকার জন্য কয়েকটি সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল আছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গীতে হোটেল পলাশ, লঞ্চঘাট মোড়ে হোটেল তাজ, পোস্ট অফিস মোড়ে হোটেল সোহাগ, চৌরঙ্গীর প্রধান সড়কের সামনে হোটেল রিফাত ও হোটেল শিমুল রয়েছে। এ সব হোটেলে ধরন অনুযায়ী রুম ভাড়া ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা।
এ ছাড়া টুঙ্গিপাড়া থানা রোডে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মধুমতি নামে একটি মোটেল আছে। মোটেলটিতে এসি ও ননএসি রুম রয়েছে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এ ছাড়া এখানে ডরমেটরিতে ৫২টি সিট রয়েছে। ভাড়া ২০০ টাকা। মোটেলটিতে খাবারের ব্যবস্থাও আছে।
১। গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউজ, যোগাযোগঃ ( নেজারত ) ডেপুটি কালেক্টর, ফোনঃ ০২-৬৬৮৫২৩৪,০২-৬৬৮৫৫৬৫
২। জেলা পরিষদ কটেজ, গোপালগঞ্জ, যোগাযোগঃ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, ফোনঃ ০৬৬৮-৬১২০৪
৩। হোটেল মধুমতি, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, যোগাযোগঃ জনাব শেখ আহমেদ হোসেন মির্জা, ফোনঃ ০২-৬৬৫৬৩৪৯,
মোবাইলঃ ০১৭১২-৫৬৩২২৭
৪। হোটেল রানা, চৌরঙ্গী, গোপালগঞ্জ, যোগাযোগঃ জনাব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, ফোনঃ ০২-৬৬৮৫১৭২
৫। হোটেল সোহাগ, পোস্ট অফিস সড়ক, গোপালগঞ্জ, যোগাযোগঃ জনাব সোহরাব হোসাইন, ফোনঃ ০৬৬৮-৬১৭৪০